সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে পণ্যের বাজারমূল্য সহনশীল রাখার পথ খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রায় বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি ২০৩০ সালের মধ্যে ভোক্তাবাজারে পরিণত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের দেশে ব্যবসা করার অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে।
বিদেশি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ দেশ সবসময় প্রস্তুত আপনাদের স্বাগত জানাতে। আপনারা বাংলাদেশকে আপন দেশ হিসেবে মনে করবেন, বিনিয়োগ করবেন।’
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে জিনিসপত্রের দাম সহনশীল রাখার পথ খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই পদক্ষেপ নিতে হবে, তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন না থাকে, সে ব্যবস্থা করা হবে। সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে তার বাস্তবায়ন হবে।
‘এলডিসি থেকে উত্তেরণে একদিকে সুযোগ সৃষ্টি করে, অন্যদিকে চ্যালেঞ্জও আছে। আশা করি, সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতাও অর্জন করব। কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে ব্যবসায়ীদের।’ একইসঙ্গে ব্যবসা উত্তরণে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
যুক্তরাজ্য বা জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং উচ্চপ্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যেতে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা করতে বাধা নেই। আমাদের ভালো লক্ষ্য থাকা উচিত।’
কোভিড মহামারির অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাণিজ্য অবরোধ পাল্টা অবরোধে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশগুলোকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন করেছে। শুধু আমাদের মতো দেশই নয়, উন্নত দেশও হিমশিম খাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও এবং ২ শতাধিক বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন এবং রফতানি ও স্থানীয় ভোক্তাবাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে এ আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী (কর্ম দর্জি), বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) উপমহাপরিচালক জিয়াংচেন জং অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন বলেন, দেশে বিনিয়োগ আনার সক্ষমতা ছিল না। এখন সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। ওয়ালমার্ট, জারা’র মতো কোম্পানি কলকাতায় চলে এসেছে। এখন তাদের বাংলাদেশে আসার সময় হয়েছে। বাংলাদেশের রফতানির সম্ভাবনার পাশাপাশি লোকাল কনজ্যুমার মার্কেটও বড় হচ্ছে।’
‘দেশে এখন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দৃশ্যমান। আমাদের এসব সক্ষমতা তুলে ধরা দরকার। অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকার বিজনেস ফ্যাসিলিটেশনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে, ’ বলেন তিনি।
তিন দিনের এ সামিটে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে ১৭টি সেমিনার ও তিনটি প্ল্যানারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে।