বোরকা পরে জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনায় ৪ জন গ্রেপ্তার

Google search engine

ঢাকার মৌচাক মোড়ের ফরচুন শপিংমলের একটি জুয়েলারি থেকে স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া চুরি হওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে ১৯০ ভরি উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

শম্পা জুয়েলার্স নামের সে দোকান থেকে ‘৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার’ চুরির অভিযোগ করা হয়েছিল।

শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারের তথ্য তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন- শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিন (৪৬), অনিতা রায় (৩১), নূরুল ইসলাম (৩৩) ও উত্তম চন্দ্র সুর (৪৯)।

গত ৯ অক্টোবর ভোরে এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, বোরকা পরা দুই ব্যক্তি শাটারের তালা কেটে দোকানে ঢুকছেন।

দোকান মালিক অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসের ভাষ্য, দোকান থেকে মোট ‘৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার’ চুরি করে নিয়েছে বোরকা পরা ওই চোর চক্রের সদস্যরা।

“ডিসপ্লেতে ৪০০ ভরির মত স্বর্ণালংকার ছিল। এছাড়া ভেতরে আরো ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, যেগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে বন্ধকি সম্পদ হিসেবে নিয়ে রাখা হয়েছিল। এছাড়া চোরেরা ক্যাশ কিছু টাকাও নিয়ে গেছে।”

চড়তে থাকা সোনার বাজারে চুরি যাওয়া এই স্বর্ণালংকারের মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।

এ ঘটনার পর দোকান মালিক রমনা থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলা তদন্তে নেমে চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিল ডিবি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, “আসামিরা গত তিন মাস ধরে ফরচুন শপিং মলের স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করছিল। সে অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকবার রেকি করে।

“চুরির উদ্দেশ্যে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগে থেকেই মার্কেটের পেছনে টিনের চালের নিচে লুকিয়ে রাখে।”

তিনি বলেন, ঘটনার দিন দিনের বেলায় শৈশব রায় সুমন নামে চক্রের এক সদস্য শপিংমলে ঢুকে বাথরুমের জানালার গ্রিলে সুতা দিয়ে ‘ইউ লুপ’ তৈরি করে সরঞ্জামগুলো মাটি পর্যন্ত নামিয়ে বেঁধে রাখে। চুরির সময় নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য বোরকাগুলো বাথরুমে রেখেছিল তারা।

ডিবি কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনার দিন রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আসামিরা গণপূর্ত কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে মার্কেটের পেছনে পৌঁছে। আগে থেকে বাঁধা সুতার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তারা ছাদে উঠে গ্রিল কেটে বাথরুমে প্রবেশ করে এবং বোরকা পরা অবস্থায় বাথরুমের দরজা ভেঙে শপিংমলে প্রবেশ করে শম্পা জুয়েলার্সে হানা দেয়। ভোর আনুমানিক ৪টা ২৫ মিনিট থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে একই পথে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তারা ব্যবহৃত বোরকা ও সরঞ্জাম গণপূর্ত কোয়ার্টারের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

তিনি বলেন, একই দিন বরিশালের উজিরপুর থানার পূর্ব হারতা গ্রামে অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্য শৈশব রায় সুমনের স্ত্রী অনিতা রায়ের হেফাজত থেকে ৫২ দশমিক ৮১ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। সুমনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আরেক অভিযানে শুক্রবার রাত সোয়া ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের কথা তুলে ধরে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তার কাছ থেকে প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ, একটি মোটরসাইকেল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একই দিন ভোর আনুমানিক পৌনে ৫টার দিকে শাঁখারী বাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অর্থ সরবরাহকারী ও রেকিতে অংশ নেওয়া উত্তম চন্দ্র সুরকে। তার কাছ থেকে ১৩ দশমিক ৬৭ ভরি স্বর্ণ এবং ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রৌপ্য উদ্ধার করা হয়েছে।

Google search engine